It's me MRK Bayzid. Welcome to blog website.

Header Ads

Header ADS

 গল্প

"ফিরে দেখা"

*** জুয়েল ***
ট্রেনের বাথরুম থেকে বের হয়ে মোবাইল টিপতে টিপতে হাটতেছি এমন কেউ একজনের সাথে অনেক জোরে ধাক্কা খেলাম। তাকাতেই অবাক হয়ে যায়।
কারন যার সাথে ধাক্কা খেলাম সে আর কেউ নয়, আমার ক্লাসমেট ফারিয়া।
ফারিয়াঃ কিরে তুই?
আমিঃ হুম, আমি।
ফারিয়াঃ তোর অভ্যাস গুলো এখনো যায় নি?
আমিঃ কেন, আমি আবার কি করলাম?
ফারিয়াঃ এই যে মেয়েদের পিছনে ঘুরা, ধাক্কা দেওয়া।
আমিঃ তোকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিই নি। আচ্ছা বাদ দে,,, ও (কোলে একটা বাচ্চা) কে?
ফারিয়াঃ ও আমার ছেলে।
আমিঃ ওহ, ওর বাবা আসে নি?
ফারিয়াঃ হুম, ওই যে!!
আমি দেখে প্রথমে হেসে দিলাম।
ফারিয়াঃ হাসছিস কেন? ও কি মানুষ না?
আমিঃ আমি কি একবারও বলছি সে মানুষ না। তোর মনে আছে যখন আমরা নবম শ্রেণিতে পড়তাম তোকে আমি প্রপোজ করেছিলাম। আর আমি কালো সেজন্য তুই প্রপোজ তো একসেপ্ট করিস নি তার উপর সবার সামনে আমার ডান গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছিলি৷
ফারিয়া কিছু না বলে চুপ করে আছে৷
চলেন আপনাদের পুরো বিষয় টা বুঝিয়ে বলি। প্রথমে পরিচয় টা দিয়ে দিই। আমি জুয়েল। আপাতত একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি৷ ছোট শালির বিয়ে, বউয়ের সাথে সেখানেই যাচ্ছি। আর যার সাথে এতোক্ষণ কথা বললাম সে আমার ক্লাসমেট। কোনো এক সময়ের ক্রাশ।
আসল কাহিনীতে আসি।
যখন আমরা নবম শ্রেণিতে পড়তাম তখন প্রেম ভালোবাসা খুব একটা বুঝতাম না। কিন্তু ফারিয়াকে দেখলে একটা অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করতো। ওরে দেখলে মনে হতো আমাএ রক্ত চলাচল বেড়ে গেছে৷ ওর সামনে গেলে আমার মুখ দিয়ে কথা বের হতো না। আমি যে ফারিয়াকে পছন্দ করতাম সেটা আমার সব বন্ধুরাই জানতো। একদিন ওরা প্ল্যান করলো আমাকে দিয়ে ফারিয়াকে প্রপোজ করাবে৷
এমন একদিন স্কুলে অনুষ্ঠান চলছে৷ সানি একটা ফুল নিয়ে এসে আমাকে দিয়ে বললো।
সানিঃ আজকে ফারিয়াকে প্রপোজ করবি। নাহলে পাখি উড়ে চলে যাবে। আমি শুনেছি আবিদ ভাইয়াও নাকি ফারিয়াকে পছন্দ করে।
আমিঃ আরে কেমনে করবো৷ এতো মানুষ,,
সানিঃ অনুষ্ঠান শেষে সে ক্লাসে আসবে৷ তখন করবি। আর টেনশন নিস না। আমরা আছি।
আমিঃ আচ্ছা দেখি,,,
সানিঃ দেখি না। আয়মান ওরে ডেকে নিয়ে আসবে।
সানির কথা শুনে ভালোও লাগছে আবার ভয়ও লাগছে৷
যাইহোক অনুষ্ঠান শেষে আমার সকল ক্লাসমেট ক্লাসে আসলো৷ সানি আয়মান আমাকে বার বার গুতা দিচ্ছে তবুও বলছি না।
এমন সময় আয়মান বললো।
আয়মানঃ এই ফারিয়া শোন। তোকে জুয়েল কিছু বলবে।
ফারিয়াঃ কি বলবি তাড়াতাড়ি বল।
আমি বার বার অন্যদের দিকে তাকাতে লাগলাম। সানির লাথি খেয়ে বাস্তবে ফিরে আসলাম। তখন তেমন ফ্লিম স্টাইল জানতাম না। এমনিতে ফুলটা হাতে নিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে ওরে ভালোবাসি বলে দিলাম৷
সাথে সাথে ফারিয়া রাগান্বিত হয়ে আমার ডান গালে একটা চড় মারে৷
ফারিয়াঃ তোর কোনো যোগ্যতা আছে আমার সাথে প্রেম করার? নিজের চেহারা দেখছিস কখনো আয়নায়। কোথায় আমি আর কোথায় তুই।
তোর তো আমার বন্ধু হওয়ারও যোগ্যতা নাই৷ যা নিজের মতো কাওকে দেখে প্রেম করিস৷ যত সব গরিবের দল।
এতো কথা বলেও ফারিয়ার শান্তি হয় নাই। সোজা গিয়ে স্যারের কাছে বিচার দেয়।
পুরো ক্লাস আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে সবার সামনে জোকার দাঁড়িয়ে আছে।
বিপ্লব স্যার এসে সেদিন ইচ্ছে মতো পিটাইছে আমাকে। এরপর বাড়িতে যাওয়ার পথে আমার বাবার সাথে ফারিয়ার একটা বান্ধবীর দেখা হয়৷ সে সব কিছু বাবাকে বলে দেয়। বাড়িতে যাওয়ার পর বাবাও ইচ্ছে মতো পিটাইছে।
সেদিন থেকে স্কুলে আমি একধরনের এলিয়েন এর মতো ছিলাম। দেখতে দেখতে কতো গুলো বছর পার হয়ে গেছে।
ওর জামাইকে দেখে হেসে দিলাম কারন সে আমার চেয়েও কালো৷ মাথায় চুল নেই। ফারিয়ার থেকে ২-৩ ইঞ্চি ছোট হবে। তার উপর বয়স্ক।
ফারিয়াঃ কালোরা কি মানুষ না? আর ও সরকারী চাকরি করে৷ আচ্ছা বাদ দে, এখন বল তুই বিয়ে করেছিস?
আমিঃ হুম,,, কিন্তু তোর মতো সুন্দর নয়।
ফারিয়াঃ এখানে আছে?
আমিঃ হুম আছে।
ফারিয়াঃ কোথায়। এখানে তো তেমন কাওকে দেখতেছি না। যাও একটাকে দেখতেছি সে জীবনেও তো বউ হবে না।
আমিঃ কাকে দেখতেছিস?
ফারিয়াঃ ওই লম্বা চুল, নীল শাড়ি পড়া। ওটা ছাড়া আর কেউই একা নাই৷ আর ওটা জীবনেও তোর বউ হবে না।
আমি ওর কথা শুনে হেসে দিলাম। আসলে ও যার কথা সেই আমার বউ৷
এমন সময় ট্রেন স্টেশনে এসে দাঁড়ায়,, দেখলাম জান্নাত (আমার বউ) আমার আগেই নেমে গেছে।
আমিও তাড়াতাড়ি করে নেমে ওর থেকে ব্যাগ নিয়ে ওর একটা হাত ধরলাম।
ফারিয়া সামনে এসে বললো,,,
ফারিয়াঃ আমি জানতাম তুই আর ভালো হবি না। মেয়েদের পিছনে ঘুরা, হাত ধরার অভ্যাস তোর রয়েই গেছে। আর এই মেয়ে, তুমিও চুপ করে বসে আছো যে? ও তোমার হাত ধরে আছে৷
জান্নাতঃ বর হাত ধরবে না তো কে হাত ধরবে?
ফারিয়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি একটা হাসি দিয়ে জান্নাতের হাত ধরে হাটতে লাগলাম।
জীবনে কাওকে কখনো ছোট করে দেখতে নেই। হয়তো সে এমন কিছু হয়ে যাবে যা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি৷ আমরা যা করবো প্রকৃতি সেটাই আমাদের ফিরিয়ে দিবে।

#Collected from Love Story Bangla

No comments

Powered by Blogger.